ট্রান্সজেন্ডার
বিজ্ঞান বাস্তবতা এবং ষড়যন্ত্র
ইদানিং সারাবিশ্বে হটাৎ করে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বেশ আলোচনা হচ্ছে। দাবী করা হচ্ছে জন্মের সময় একজনের জননাঙ্গ পুরুষের মতন হলে তাকে ছেলে বলা বা বিপরীত হলে তাকে মেয়ে হিসেবে রিকগনিশন দেওয়ার ব্যাপারটা ভুল। মানসিক ভাবে যদি কেউ নিজেকে একটা বয়সের পর মনে করে সে আসলে ভুল শরীরে জন্ম নিয়েছে, সে আসলে নিজেকে মেয়ে মনে করে যদিও তার দেহ ছেলের মতন অথবা যদি সে নিজেকে ছেলে মনে করে যদিও সে আসলে তার দেহ মেয়ের মতন তবে তাদের অধিকার আছে লিঙ্গ পরিবর্তনের। এই ছেলে শারিরীক গঠন বদলে ভিন্ন লিঙ্গের হওয়ার চেষ্টা, যারা এই পদ্ধতি ফলো করে, তাদেরকে বলা হয় ট্রান্সজেন্ডার।
© কলা বিজ্ঞানী |
একই সাথে অনেকে হিজড়ার সাথে ট্রান্সজেন্ডার ব্যাপারটাকেও গুলিয়ে ফেলেন, কেউ না বুঝে, আর কেউ ইচ্ছা করে।
আসলে বাস্তবতা কি? বিজ্ঞান কি বলে? আজ আমরা সেই আলোচনাই করবো, ইন শা আল্লাহ।
প্রথমে আসি একজন কিভাবে ছেলে হয় বা মেয়ে হয়। এখানে কি আদৌ ভুলের কোনো ব্যাপার আছে কিনা। সেই সাথে জননাঙ্গের গঠনের সাথে বিহেভিয়ার কিংবা মানসিকতায় কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটাও জানার চেষ্টা করবো।
আমরা জানি পুরুষের যেই স্পার্মাটোসাইট বা জনন কোষ, এটা হ্যাপলয়েড, অর্থাৎ মাত্র এক সেট ক্রোমোজম আছে এতে। অন্য সব কোষ ডিপ্লয়েড, যেখানে দুই সেট ক্রোমোজম, এক সেট বাবা থেকে আর অন্য সেট মা থেকে পাওয়া।
স্পার্মাটোসাইট এ সেক্স ক্রোমোজম যেকোনো একটা হতে পারে, X অথবা Y. অন্যদিকে ডিম্বাণু বা ওভাম এ সেক্স ক্রোমোজম X.
যদি নিষেক বা ফার্টিলাইজেশনের পর তাতে সেক্স ক্রোমোজম ওরিয়েন্টেশন XX হয়, তখন সে মেয়ে হিসেবে জন্ম নেয়, XY হলে সে জন্ম নেয় ছেলে হিসেবে।
এই যে ক্রোমোজমের এই স্পেসিফিক গঠন এটাকে বলা হয় জিনোটাইপ।
ক্রোমোজমের কাজ কি?
ক্রোমোজম আসলে "ডি এন এ" এর প্যাচানো রূপ। অনেক পেচিয়ে এই শেপ আসলে গঠিত হয়। এই "ডি এন এ" তে আসলে জেনেটিক ইনফরমেশন থাকে, যার উপর ভিত্তি করে দেহের স্ট্রাকচারাল এবং ফাংশনাল প্রোটিন তৈরী হতে থাকে।
মূল ব্যাপার হলো "ডি এন এ" থেকে যেই জেনেটিক ইনফো আছে, সেটা কপি করে তৈরী হয় mRNA , যা পরে ribosome এর সাথে যুক্ত হয়ে সেই ইনফরমেশন অনুযায়ী এমিনো এসিড চেইন জোড়া লাগায় এবং প্রোটিন তৈরী হয়।
স্ট্রাকচারাল প্রোটিন হলো মানবদেহ গঠনের সাথে জড়িত। ফাংশনাল প্রোটিন হলো দেহের মধ্যে বিভিন্ন কাজের জন্য নিবেদিত (যেমন এনজাইম, বিভিন্ন আয়ন চ্যানেল, কিছু কিছু হরমোন)।
তাহলে ক্রোমোজমে থাকা ডিএনএ থেকে যেই ইনফরমেশন আসে, সেটার উপর ভিত্তি করেই মানবদেহ গঠন এবং তার ফিজিওলজিকাল ফাংশন গুলো নির্ধারিত হয়। আর সেক্স ক্রোমোজম এর তথ্য অনুযায়ী সেক্স ওরিয়েন্টেশন এবং সেই সংক্রান্ত যত যা কিছু আছে, সব রেগুলেটেড হয়।
বাস্তবেও তাই দেখা যায়।
বায়োলজিকাল ভাবে লিঙ্গ যে দুই প্রকার তা অবশ্য ওয়েস্ট এর ট্রান্স মুভমেন্ট এর সাথে জড়িতরা অনেকেই স্বীকার করে। তবে তারা যেটা বলতে চায় যে তাদের বায়োলজিকাল স্ট্রাকচার যাই হোক, তারা নিজেরা মনে মনে যেটা অনুভব করে, তাদের লিঙ্গের পরিচয় আসলে সেটাই। আর এই পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করতে তারা লিঙ্গ রুপান্তর এর জন্য মেডিকেলীয় ভাবে কিছু প্রসেসের মধ্য দিয়ে যায়।
যেমন কেউ ছেলে থেকে মেয়ে হতে চাইলে তার সার্জারি করে প্রথমে টেস্টিস, পেনিস এগুলা কেটে বাদ দিয়ে সেখানে একটা ভ্যাজাইনা সার্জিকাল ভাবে কন্সট্রাকশন করা হয়। উল্লেখ্য এখানে জরায়ু বা ডিম্বাশয় গঠিত হয় না। মহিলাদের দৈহিক কিছু বৈশিষ্ট্য আসলে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন নামক দুইটা হরমোন দ্বারা অনেকাংশে আসলে নির্ধারিত হয়। যেমন বক্ষদেশ বা নিম্নাদেশ এর বিশেষ গঠন, গলার সূক্ষ মিহি স্বর, এমনকি মাসিক চক্র এগুলা সব এই হরমোনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এগুলো তৈরী হয় মূলত ওভারী থেকে। কিন্তু এদের তো ওভারী নেই। তাই ডিম্বাণু যেমন য়ৈরী হয় না, একই ভাবে ঐ হরমোনও আসলে ঐ পরিমাণে তৈরী আর হয় না। তাই সার্জারির পরে আলাদা ভাবে এদেরকে হরমোন নিতে হয়। পুরো প্রসেস অবশ্য ভয়ানক রকমের ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার। সেই সাথে এত কিছুর পফেও কমপ্লিট ভাবে তার পক্ষে নারী হওয়াও সম্ভব না। সে কোনোদিন গর্ভধারণও করতে পারবে না।
কেউ মেয়ে থেকে ছেলে হতে চাইলে তাকেও সার্জারি করে ব্রেস্ট কেটে ফেলতে হয়, তাকেও আলাদা ভাবে টেস্টোস্টেরন ইঞ্জেক্ট করতে হয়। কিন্তু দিন শেষে তার টেস্টিস নেই, সে শুক্রাণু তৈরী করতে পারবে না। সেও আসলে বন্ধ্যাই থাকবে।
এতক্ষণের আলোচনায় এটুক খুব সহজে স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যায় যে এই ট্রান্স মুভমেন্ট, এটা আর যাই হোক, মানুষের স্বাভাবিক গঠনের সাথে যায় না।
তাহলে এই মনে করার ব্যাপারটা?
ডিলিউশন বলে একটা ব্যাপার আছে। বাস্তবতা যাই হোক, সত্য যাই হোক, অনেক ব্যক্তি অনেক সময় এমন কিছু বিশ্বাস করে যা আসলে বাস্তবতা থেকে জোজন জোজন দূরে। ছেলে হয়েও নিজেকে মেয়ে মনে করা কিংবা মেয়ে হয়েও নিজেকে ছেলে মনে করার ব্যাপারটাকে এভাবে তুলনা করা যেতে পারে।
কারও কারও মাঝে এমন দেখা দিতে পারে যে ছেলেও তার কিছু স্বভাব একটু মেয়েলী। বা মেয়্ব হলেও তার স্বভাব কিছুটা পুরুষের মতন। এটা মানুষের পরিবেশের প্রভাবে অনেক সময় এমন হতে পারে। হতে পারে সে নিজ পরিবারে যেভাবে বেড়ে উঠেছে সেটার প্রভাব, হতে পারে সে টিভিতে বা ইন্টারনেটে যা দেখেছে সেটার প্রভাব। কিন্তু এইসব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ নিজেকে ছেলে হওয়া সত্বেও যদি মেয়ে দাবী করে তবে তাকে ডিলিউশন বলা যায় কিনা সেই প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা কোনোভাবেই ন্যাচারাল না।
Author: Dr. Murtoza Shahriar