ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু কতটা ভয়ানক তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমার বন্ধু হাসিব
হাসিব আহমেদ দুর্লভ― এই ছেলেটার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০১৬ সালে। হাসিবকে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম মাহিরদের সার্কেল থেকে। আজিমুরশান মাহির, হাসিব, পাপ্পু, নিলয়― ওরা ছিল বেশ রাজনীতি সচেতন। এদের মধ্যে আবার জিওপলিটিক্স নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল মাহির আর হাসিবের।
হাসিব: ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার আগে এবং পরে |
তখন আমার নিজের WMDP নামে একটা ডিফেন্স কমিউনিটি ছিল। আমরা এডমিনরা ছাড়াও অন্যান্য মেম্বাররাও সেখানে লিখালিখি করত। আমি ভুল না করে থাকলে ২০১৯ সালের দিকে হাসিব আমাকে বলে ওরে গ্রূপের এডমিনশীপ দিতে; ও নিয়মিত লিখালিখি করবে। আমি ওর কথামত কাজ করলাম। হাসিবও বেশ দারুন দারুন আর্টিকেল লিখতে থাকলো। আমাদের কমিউনিটির এনগেজমেন্টও হু হু করে বাড়তে থাকলো।
২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে যখন ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ টুয়েন্টি ওয়ান বিমান শ্যুটডাউন করলো পাকিস্তান, সেদিনও হাসিব বিশাল এক লিখা দিলো। আমার লিস্টে এমন অনেকেই আছেন যারা ওই সময়টাতেও WMDP তে এড ছিলেন। তারা নিশ্চয়ই জানবেন হাসিবের লিখার হাত কি দারুন ছিল। কিন্তু ঐটাই ছিল ওর শেষ লিখা। এরপর প্রায় এক বছর হাসিব গায়েব। Hasib Ahmed Durlov নামে আগের আইডি আর নাই। নাম চেন্জ করেছিল অথবা নতুন প্রোফাইল ছিল।
২০২০ সালে হাসিবকে আমি আবিষ্কার করলাম একজন ক্রিশ্চিয়ান এবং ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে। আমার মাথায় সেদিন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারন এক বছর আগেও এই ছেলেরে আমি নামাজ পড়তে দেখেছি। এতটুকু সময়ের মধ্যে কি এমন হয়ে গেলো যে এতটা পরিবর্তন.?
তখন আমি ট্রা ন্স ইস্যুটা নিয়ে এতকিছু বুঝতাম না। হাসিবকে জিজ্ঞেস করলাম ‛তুই কি মেয়ে হইতে চাইতেছিস'? ও আমাকে রিপ্লাই করলো ‛অলরেডি হয়ে গেছি, পাঁচ তারিখ আমার ইস্ট্রোজেন ইনজেক্টের ফার্স্ট ডেট’
ওকে আমি অনেকভাবে বুঝালাম, জানতে চাইলাম কেন এমন বদলে গেলি? ও আমাকে বললো- ওর নাকি ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের মত সাজতে, মেয়েদের ড্রেস পরতে, মেয়েদের মত পুতুল নিয়ে খেলতে ভালো লাগে। কিন্তু ওর আব্বু আম্মু ওকে খুব স্ট্রিক্টলি হ্যান্ডেল করায় ওই কাজ কখনও করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু কানাডায় যাওয়ার পর ওর সেই স্বাধীনতা হয়েছে। আমাকে একবার খুব গর্ব করে বললো ‛ফ্রিডম জিনিসটাকে আমি প্রচন্ডভাবে উপভোগ করছি, এখানে আমাকে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই’
কিন্তু আমি রিকল করলাম, ও যখন মুসলিম ছিল তখনও কিন্তু এতটা লিবারেল ছিল না। সামগ্রীকভাবেই বেশ রক্ষণশীল ছিল ছেলেটা। হটাৎ এমন স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠার কারন তাহলে কি হতে পারে?
এরপর আবারও বেশ কিছুদিন কথা হয়নি। ২০২১ এর জুলাই এর দিকে একদিন হুট করে হাসিবই আমাকে নক দিয়ে বললো 'কিরে শালা কি খবর'? তারপর দুইজন মিলে খোশগল্প করলাম। একপর্যায়ে হাসিব বললো শরীরে ইস্ট্রোজেন ইনজেক্ট করার পর থেকে নাকি ওর কয়েকটা মেজর মেন্টাল ইলনেস দেখা দিচ্ছে। যেমন- বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসর্ডার, বাইপোলার ডিসর্ডার, ডুয়াল পারসোনালিটি ডিসর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। বললাম কাউন্সিলিংয়ে থাক, ও উত্তর দিলো অলরেডি নাকি কাউন্সিলিংয়ে আছেই।
২০২২ সালে হাসিবের সাথে আমার শেষ কথা হয়। সেদিন হাসিব আমাকে দুইটা ছবি দেয়, দেখলাম ও হাত কেটেছে ব্লেড দিয়ে। ফিনকি দিয়ে ব্লাড বের হচ্ছে। ওই অবস্থায় আমাকে টেক্সট করতেছে। আমি কিছু বুঝে না পেয়ে আন্টির নাম্বার চাইলাম। ভাবলাম আন্টি ফোন দিয়ে বললে হয়ত শুনবে। কিন্তু আন্টিকে ফোন দিয়ে এই খবর জানানোয় ও আমাকেই ব্লক মেরে দেয়। আবার তিনদিন পর আনব্লক করে বলে- 'আমি খুব ডিপ্রেসড'। বললাম যে আমি আছি, তুই নি:সঙ্কোচে সব বল। জানালো জেন্ডার কনভার্টের পর ওরে নাকি এক ইন্ডিয়ান পোলা রেপ করতে চেয়েছিল। এটা শোনার পর আমার আর কিছু বলার শক্তি ছিল না। সেদিন এই কথাগুলো শেয়ার করে হাসিব নিজেই আমাকে পার্মানেন্টলি ব্লক করে দেয়। আর কোনোদিন আমাদের যোগাযোগ হয়নি।
আমার বিশ্বাস, আমার বন্ধু একজন কনজারভেটিভ মুসলিম থেকে ট্রা ন্স জে ন্ডা র হওয়ার প্রসিডিওর এত সহজ ছিলনা। ও খুব মারাত্মকভাবে ব্রেইনওয়াসড হয়েছিল। শেষদিকে ও স্যাটানিজমও প্রাকটিস করত বলে শুনেছি। ওর পুরো লাইফটাই শেষ করে দিয়েছে এই ইস্যু। একমাত্র সন্তানকে ঘিরে বাবা মায়ের বহু স্বপ্নও ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে সেই এজেন্ডার কাছে।
লেখক: শাফিন রহমান